
প্রায় ছয় মাস আগে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হলেও কোথাও তা মানা হচ্ছে না। কাঁচাবাজার থেকে বিপণি বিতান সব জায়গায় দেদার ব্যবহার হচ্ছে পলিথিনের। ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, সহজ বিকল্প না থাকায় পলিথিন ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গত ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপ আর ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। অভিযান চালানো হয় বাজার-কারখানায়। তবে নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। অভিযান চালাতে গিয়ে কোথাও কোথাও বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে।
প্রায় সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে পলিথিন ব্যাগে। বেশ সস্তা বলে একে বেছে নেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদেরও গুনতে হয় না বাড়তি খরচ। কাগজ, কাপড় বা পাটের ব্যাগে খরচ বেশি হওয়ায় এগুলো ব্যবহারে আগ্রহী নন কেউ।
পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করে এমন এক বিক্রেতা বলেন, এখন আগের চেয়ে কম বিক্রি হচ্ছে। অনেকে বিকল্প খুঁজছে, তবে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘আমরাও সচেতন পলিথিন নিয়ে। তবে পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এখন বিকল্প কিছু ব্যবহার করতে পারছি না।’
হাতে গোনা কয়েকটি সুপারশপ কাগজ, কাপড় ও পাটের তৈরি ব্যাগ দেয় ক্রেতাকে। এজন্য ক্রেতাদের গুনতে হয় ৮ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। খরচ কমাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে এসব ব্যাগ বার বার ব্যবহারে।
পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে পরিবেশ অধিদপ্তর, পাট অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সিটি করপোরেশনের সম্মিলিত উদ্যোগে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু দিন পরপর নিষিদ্ধ করে জরিমানা আরোপ করেই পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত বিকল্প।
কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ধীরে ধীরে বাজার থেকে পলিথিন সরাতে হবে; যাতে এ সময়ের মধ্যে মানুষ বিকল্পে অভ্যস্ত হয়।
“সাধারণ জনগণের ব্যবহারের জন্য সহজলভ্য, সুলভ ব্যাগ আনতে পারেনি। বিকল্পের ব্যবস্থা না করে জরিমানা করাটা উচিত না। প্রতিদিন ১ কোটির বেশি পলিথিন ব্যবহৃত হয়। ১ কোটি পাটের ব্যাগ সাপ্লাই দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না? ক্যালকুলেশনটা তো আমাদের সামনে নাই। বন্ধ জিনিস আবার বন্ধ করে দিলাম সেটা টেকসই হবে না, গবেষণা প্রয়োজন।”
পলিথিনের ব্যবহার কমাতে উৎপাদন পর্যায়ে বন্ধ করা, কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া, বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
২০২৩ সালে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল ঢাকা শহরে প্রতিদিন আড়াই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। ঢাকায় এক একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে।
দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হয়। এসব ব্যাগ কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি হলেও কাপড়ের ব্যাগ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলছেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় পরিমাণটা কমই; তবে সেটার ব্যবস্থাপনা হচ্ছে না।
“সেগুলো নদী-নালায় যাচ্ছে। এটা প্রপার ম্যানেজমেন্টে নিয়ে গেলে বাজার মনিটরিং, উৎপাদন ব্যবস্থা ইত্যাদির প্রয়োজন পড়বে না, বা কম প্রয়োজন হবে।”