
ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসান ছিলেন অবিসংবাদিত। কিন্তু ব্যবসায় নাম লিখিয়ে তারকা অলরাউন্ডার জড়িয়ে পড়েন বিতর্কে। এর মধ্যে শেয়ার বাজার কারসাজি ও কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ব্যাপক আলোচিত।
শেয়ার বাজারে অনিয়ম নিয়ে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারসাজি করেছেন সাকিব। শেখ হাসিনা সরকারের সময় কোনো ব্যবস্থা না নিলেও ৫ আগস্টের পর সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
কেউ যদি দেখাতে পারে আমি শেয়ার বাজার থেকে এক টাকাও লাভ করেছি, আমি খুশি মনে আমার সব দিয়ে দেব। আমি এই ব্যবসা থেকে কোনো লাভ করিনি, আর আমি নিজেরাও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমি কোনো মিটিংয়ে যাইনি, এমনকি ওখানে গিয়েও দেখিনি। তাহলে আমি কীভাবে দোষী হতে পারি?
গত ২৪ সেপ্টেম্বর শেয়ার ব্যবসায়ে কারসাজিতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তার মা শিরিন আকতারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তিনি বলেন, শুধু বিনিয়োগ করেছি বলে কি ক্ষতির দায়ও আমার? আমি তো এই ব্যবসায় টাকা হারিয়েছি। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি লাভ করেছি, আমি সেটা দেখতে চাই। আমি চাই একটি সঠিক তদন্ত হোক, যাতে আমি বুঝতে পারি কোথায় আমি এত ক্ষতির সম্মুখীন হলাম। আমি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে মেসেজও করেছি, যদিও এখনো কোনো উত্তর পাইনি। তবে আমি এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী।
‘আমি শেয়ার মার্কেট, ব্যাংকিং সেক্টর এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করছি, যাতে তারা আমাকে এগিয়ে যাওয়ার একটা পথ দেখায়। আমি এই বিষয় থেকে পালিয়ে যাচ্ছি না। আমি সামনে এসে সবকিছু ঠিক করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, আমার সেই সুযোগ প্রাপ্য, আর যদি তারা সেই সুযোগ দেয়, তাহলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব। আমি মনে করি না আমি কোনো অপরাধ করেছি, যেভাবে আমাকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তখন পরিস্থিতি আলাদা ছিল, কিন্তু এখন সবকিছু শান্ত হয়ে এসেছে, মানুষ বুঝতে পারছে যে শুধু একটি ছবির জন্য একজন মানুষকে এমন শাস্তির মুখোমুখি হওয়া উচিত না।
তাই শেয়ার বাজার নিয়ে একটি স্বচ্ছ তদন্তের দাবি করেছেন সাকিব। সেখানে নিজে সাহায্য করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। সাকিবের ভাষ্য, অবশ্যই। তাদের যেকোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে, আমি দিতে প্রস্তুত—ক্র্যাব ফার্ম হোক বা শেয়ার বাজার ব্যবসা, উভয় ক্ষেত্রেই। যদি তারা মনে করে যে আমাকে ডেকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত করা প্রয়োজন, তাহলেও আমি খুশি মনে সহযোগিতা করতে রাজি আছি। আমি কিছু লুকাচ্ছি না, আর চুরি করে পালিয়েও যাইনি।
চাইলে পুরো বক্তব্য একসাথে গুছিয়ে একটা একক আর্টিকেল বা বিবৃতি আকারেও তৈরি করে দিতে পারি—যেমন মিডিয়ায় দেওয়ার জন্য বা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার মতো করে। যদি দরকার হয়, বলো আমি সেটাও করে দিই।
এর আগে বিএসইসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে সংঘটিত কারসাজিতে যুক্ত ছিলেন সাকিব আল হাসান। যে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স হিসাব ব্যবহার করে শেয়ারবাজারে কারসাজি করা হয় সেটি প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের। সেটি সাকিব ও তার মায়ের নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসে খোলা হয়েছিল।
গত বছরের ১৭ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ৩৫ টাকা বা ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময়ে সিরিজ লেনদেন বা নিজেদের মধ্যে হাতবদল করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরু, সাকিব আল হাসানসহ তাদের নিকটাত্মীয়, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
নয়াশতাব্দী/জিএস