৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

১৯ মে, ২০২৫

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি কমবে ৩০%, দৈনিক ক্ষতি ৪০ লাখ টাকার বেশি

আখাউড়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৫, ৩:০৫ অপরাহ্ন
ভারতের নিষেধাজ্ঞা: আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি কমবে ৩০%, দৈনিক ক্ষতি ৪০ লাখ টাকার বেশি

ভারতের নিষেধাজ্ঞায় আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধাক্কা লেগেছে। ১৭ মে ভারত সরকার কিছু পণ্যের আমদানি সীমিত করায় ১৯ মে সোমবার মাত্র ৮ টি ট্রাকে হিমায়িত মাছ, ৭টি ট্রাকে করে ভোজ্য তেল ও পাটজত দ্রব্য ১ ট্রাক রপ্তানি করা হয়, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, জুস, প্লাস্টিক, পিভিসি ও তুলা।  এর মধ্যে অধিকাংশই আখাউড়া বন্দর দিয়ে নিয়মিত রপ্তানি হতো। এতে রপ্তানি অন্তত ৩০% কমে যাবে এবং প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, ভারতের ত্রিপরা রাজ্যসহ ৭টি অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশী পণ্য প্রাণ-আরএফএল, হাশিমফুট সহ কয়েকটির জিনিসের চাহিদা থাকায় এই বন্দর দিয়ে প্রত্যেক দিন ১০ থেকে ১৫ টি ট্রাকে করে ভারতের ত্রিপুরা হয়ে ৭টি অঙ্গ রাজ্যে রপ্তানি করা হত। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এই পূন্য গুলো এখন রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এতে করে স্থানীয় ব্যবসায়রী যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই সাথে সরকার লাখ-লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান বলেন, দুই একটি পণ্য বাদে সব কটি পণ্য এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভারত সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। বন্দর দিয়ে প্রাণ, আরএফএল ও হাশিম ফুডের মতো বড় বড় কোম্পানি পন্য নিষিদ্ধের আওতায় পড়েছে। ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের সবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়েছে। সবাই দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি।

স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার ৫৪ হাজার ৪৪২ দশমিক ২২ টন পন্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ৪৫৩ কোটি ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৩ টাকার ৩৮ হাজার ৮৮৭ দশমিক ১৩ টন পন্য রপ্তানি হয়েছে। আর গত ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৭ কোটি ৫ হাজার ২০৩ টাকার ৩৮ হাজার ৭৮৩ টন পন্য আমদানি হয়েছে। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৬ টাকা। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ৪ কোটি ৭১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮১ টাকার ১০৬ টন পন্য আমদানি হয়েছে।যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭১ লাখ ৩০ হাজার ৯৪০ টাকা।  

আখাউড়া স্থলবন্দরের মৎস্য রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন আগে ট্রানশিপমেন্ট বন্ধ করেছে। এখন মাছ, পাথর ও তেল বাদে বাকি সব পন্য বন্ধ করেছে ভারত সরকার। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।আমরা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিশাল লোকসানের দিকে ধাবিত হব। দুই দেশের সরকারকে বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরসনের জন্য অনুরোধ করছি। 

মিতু এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ও আখাউড়া স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসােসিয়েশেনের সহসভাপতি নিছার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন,  আমদানি-রপ্তানি বন্ধের ভারতের এই প্রজ্ঞাপনের কারণে আমাদের রপ্তানি বানিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। যে কয়েকটি পন্য আছে সেগুলো সুচারুরূপে চালু হলে কিছুটা হলেও অন্তত দাঁড়ানাে যাবে। অন্যথায় সিএন্ডএফ এজেন্টের কাস্টমস, শ্রমিক, আমদানি-রপ্তানিকারক আমরা সবাই ক্ষতি সম্মুখীন হব।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিদিন ৪০-৫০গাড়ি রপ্তানি হতো। ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার ফলে রপ্তানি কমে গেছে। এখন মাছ, সিমেন্ট ও শুটকি মাছ রপ্তানি হচ্ছে। আজ অনেক গাড়ি আসেনি। স্থলবন্দর দিয়ে আজ মাছ,  ভোজ্য তেল ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি হয়েছে।